দুদিন আগে একটি দৈনিক
পত্রিকার খবরে পাঠ করলাম নারী নির্যাতনের একটি ভিন্নধর্মী সংবাদ। খবরের
প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, চট্টগ্রামের পুলিশ নাকি তিনজন বখাটেকে গ্রেফতার করে হাজতঘরে রেখে দিয়েছে। তাদের অপরাধ ছিল,
তারা কোন এক স্কুল ছাত্রীর ছবি
চুরি করে, তার মাথার অংশ নিয়ে ইন্টারনেটের পর্নোসাইট হতে কোন এক মেয়ের নগ্ন ছবির নিচের অংশকে কাট করে পুর্বোক্ত
স্কুলছাত্রীর মাথাকে ফটোশপের সহায়তায়
কায়দা করে পেস্ট করে দেয়। এতে যে নুতন সম্পূর্ন নগ্ন নারীর ছবি
প্রিন্ট হয়, তা ছিল যেন ছাত্রীটিরই নগ্ন ছবি। এই দুই নম্বরী নগ্ন ছবিটি দিয়ে ঐ তিন দুষ্কৃতিকারী ছাত্রীটিকে
ব্ল্যাকমেইল করার ঘৃন্য অপচেষ্টা করতে
গিয়ে ভাগ্যের অসহযোগিতার কারণে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা খায়। মেয়েটির সৌভাগ্য
যে, ঘটনা বেশীদূর গড়ানোর আগেই, ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষের
নজরে আসে। নতুবা, একবার চিন্তা করুন তো, যদি ঐ সম্পূর্ন
নগ্ন ছবিটি ঐ ছাত্রীর আত্মীয়স্বজনের হাতে পৌঁছাতো, তাহলে মেয়েটির
জীবনে কি দুর্ভোগই না নেমে আসতো। আর মেয়েটি যদি
ইতোমধ্যে কারো বাগদত্তা হতো, তাহলে তো ঐ বিয়ে শুধু
ভাঙ্গা নয়, সারা মহল্লায় মেয়েটি বদনাম হয়ে পড়তো, এবং অবশেষে এসবের ভার সইতে না পেরে হতভাগিনীকে নিজের জীবনের
মায়া ত্যাগ করতে হতো, মানে
আত্মহত্যাকেই সে তার পরিত্রাণের পথ বলে বেছে নিত।
কি করে একটি মেয়ের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি অন্য কারো হাতে যেতে পারে? সেটা বহুভাবেই হতে পারে। তাদের পারিবারিক এলবাম হতে কাছের কোন লোকই চুরি করতে পারে। প্রথমে কেউ ভালো উদ্দেশ্যে চুরি করলেও, একহাত, দুহাত হতে হতে তা পরে কোন সুযোগ সন্ধানীর হাতে গিয়ে পড়তে পারে। কিংবা যে স্টুডিওতে ছবি তোলা হয়, বা নিজেদের ক্যামেরায় তোলা ছবি যেখান হতে প্রিন্ট করানো হয়, তাদের দ্বারাও এ অপকর্মটি ঘটতে পারে। নিজের অসাবধানতাবশতঃও এলবাম হতে কোন ছবি প্রয়োজনে বের করে নিয়ে পরে যথাস্থানে না রাখায় তা হারিয়ে যেতে পারে এবং দুষ্কৃতিকারীর হাতে যেতে পারে। ঠিক এ ধরণের ঘটনা না হলেও আমার ব্যক্তিগত জীবনেও এমন একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে যা শেয়ার করলে অনেকেই সাবধান হতে পারবেন। তখনো আমি তরুন যুবক। কোন কারণে আমার ছোটবোনের একটি ছবি এলবাম হতে নিয়ে আমার পাঠ্য কোন বইতে স্থানান্তরিত করে রেখেছিলাম। সেই পাঠ্যবইটি পড়ার ফাঁকে সেটি হাতে করেই একদিন আমি পাশের বাসায় এক পরিচিত ব্যাচেলর লোকের বাসায় গিয়ে বসেছিলাম। সম্ভবতঃ পত্রিকা পড়ার উদ্দেশ্যে। মনের ভূলে যখন সেখানে হতে উঠে আসি, তখন বইটি ফেলেই চলে আসি। পরে মনে পড়লে যখন বইটি সংগ্রহ করি তখন তার মধ্যে আর ছবিটি ছিল না। ঐ ব্যাচেলর লোকটি ইচ্ছাকৃত ভাবে সরিয়ে রেখেছিল। তার দু' একদিন পরে ঐ ভদ্রলোক আবার উভয়েরই পরিচিত তৃত্বীয় কোন ব্যক্তির মাধ্যমে ছবিটি আমার মা-কে ফেরত দিয়ে যায়। কিন্তু যাবার সময় সে ঐ ব্যাচেলরকে উদ্বৃত করে যা বলে তা ছিল রীতিমত কষ্টদায়ক, অপমানজনক এবং বেদনাদায়ক। ঐ লোক আমাকে দোষারোপ করে এই বলে যে, আমরা আমাদের অবিবাহিত কন্যা/বোনের বিয়ে হচ্ছেনা, তাই তাকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেবার গোপন পরিকল্পনা করে, আমার বোনের ছবিটি তার পড়ার টেবিলে কায়দা করে ফেলে এসেছিলাম। বুঝুন ব্যাপারটা, সিম্পল একটা জিনিষ কি থেকে কি হয়ে গেল। যে ভদ্রলোক এতোদিন আমাদের নিকট বেশ ভদ্র এবং ভালো বলে বিবেচিত হতো, হঠাৎ করেই তার কুৎসিত মনের পরিচয় প্রকাশ পেল এম্নি করে। কোন মেয়ের ছবি কারো টেবিলে ফেলে আসলে বুঝি ঐ মেয়েকে কারো গলায় ঝুলিয়ে দেয়া যায়? যাক সে কথা। ডিজিটাল যুগে এভাবে ব্যক্তিগত ছবি পরের হাতে কিংবা পরের কম্প্যূটারে পাচার হয়ে যাবার নানারকম উপায় বের হয়েছে আজকাল। আজকালকার তরুন তরুনীদের হাতে তো ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোনের ছড়াছড়ি। ঢাকারই একটি বিখ্যাত প্রাইভেট ভার্সিটির (সম্ভবতঃ নর্থ সাইথ ইউনিভার্সিটি) দু বান্ধবীর কাহিনী তো এতো তাড়াতাড়ি সবাই ভূলে যান নি আশা করি। কি করে এক বান্ধবী তার অন্য বান্ধবীকে নিজ ঘরে দাওয়াত করে নিয়ে গিয়ে, একই সাথে বাথরুমে গোসল করতে ঢুকে (বড় লোকের বিচিত্র কান্ড?) এবং একে অপরের স্নানরত নগ্ন ছবি নিজেদের ক্যামেরায় ধারণ করে, সে ছিল এক রগরগে কাহিনী। শর্ত ছিল কেউ কারো ছবি বাইরে প্রকাশ করবেনা। কিন্তু আমন্ত্রিত বান্ধবিটির মনে ছিল অন্য কিছু। সে তার মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা বান্ধবীর নগ্ন ছবি ভার্সিটির অন্য একজনকে দেখায় এবং তার মোবাইলে লোড করে দেয়। পরে তা এক হাত, দু'হাত হতে হতে পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ঘৃনায়, অপমানে ও দুঃখে শেষ পর্যন্ত বর্ণিত ছাত্রীটি আত্মহত্যা করে পরিত্রাণ লাভ করে। আজকাল ফেসবুকে একাউন্ট খুলেও অনেকেই নিজেদের সদ্য তোলা ছবি সেখানে সেঁটে দিচ্ছেন। ছবি দেয়াটা সেখানে তেমন দোষের নয়, কিন্তু সে ছবি যদি হিজাববিহীন মেয়েদের হয়, বিশেষ করে যুবতী মেয়েদের, তাহলে সেখানে তা দেখার জন্য এবং সেটা নিয়ে গবেষণার জন্য যুবকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ কারণেই দেখা যায়, অনেক পুরুষেরই ফেসবুক ফ্রেন্ড সংখ্যা তার একাউন্ট খোলার অল্প কয়েকদিনের ভেতরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে এবং যার অধিকাংশই হলো মেয়ে। আমার নিজের চেনা পরিচিতজনেদের মাঝেই এমন অনেক উঠতি বয়েসী মেয়েকে দেখেছি, তারা একটি, দু'টি নয়, তাদের মোবাইলে তোলা বিভিন্ন ভঙ্গিমার ডজনে ডজনে ছবি, তাদের ফেসবুক একাউন্টের ছবিঘরে এনে সাজিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে কাট-পেস্ট করে নিয়ে যদি বিকৃতমনা কেউ কারো ছবি নিয়ে নর্থ-সাউথ ভার্সিটির মতো কিংবা চট্টগ্রামের ঐ তিন যুবকের মত নূতন এক স্ক্যান্ডাল তৈরী করে, মেয়েটির নিকট হতে টাকা উপার্জনের জন্য তাকে ব্লাক মেইল করে, তখন কে ঐ মেয়েকে রক্ষা করবে? বদ মতলবের পুরুষ সবখানেই কিছু না কিছু থাকে, ফেসবুক ও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং এই মাধ্যমে তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে প্রচুর, ধরা খাবার ভয় থাকেনা বলে। তাই, আমার মতে কোন আত্মসচেতন মহিলারই ফেসবুক একাউন্টে নিজের ছবি সাঁটা উচিত নয়, আর যদি দিতেই চান তাহলে তা পূর্ণ হিজাব সহকারেই হওয়া উচিত। ছবি নিয়ে, বিশেষতঃ যুবতী মেয়েদের ছবির এভাবে যাতে আর অপব্যবহার না করতে পারে কেউ, সেজন্য কিছু ব্যবস্থা আমরা নিজেরা নিতে পারি। প্রথমতঃ ছবি তোলাকেই নিরুৎসাহিত করা উচিত। ছবির এ ধরণের অপব্যবহার হয় বলেই ইসলামী শরীয়তে ছবি তোলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, বিনা প্রয়োজনে তোলাকে হারাম বলা হয়েছে। তারপরেও যদি ছবি তোলা হয়, তার হেফাজতে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যায়ঃ ১) স্টুডিওতে ছবি প্রিন্টের জন্য দিলে তা একটু বেশী মূল্য দিয়ে হলেও হাতে হাতে সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই করে নিয়ে যাওয়া উচিত। এতে করে স্টুডিওর অসৎ কর্মীরা কোন ছবির কপি রাখতে পারবেনা। ২) মহিলাদের ছবি মহিলা কর্মীদের দ্বারাই প্রিন্ট করানো উচিত। আজকাল ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে, তা সামান্য একটু টেকনিক্যাল জ্ঞানের মাধ্যমে নিজস্ব পি.সি-তে নিজেই ব্যক্তিগতভাবে প্রিন্ট করে নেয়া যায়। ৩) ব্যক্তিগত এলবাম সবসময় কঠোর হেফাজতে রাখা উচিত। একান্ত ঘরোয়া পরিবেশে তোলা ছবি কোনক্রমেই অন্য কারো সাথে শেয়ার করা বা তাকে দেয়া উচিৎ নয়। ৪) বিয়ে শাদী বা পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য বাইরের কাউকে এনগেজ না করা উচিত। এতে পর্দার কোন বালাই থাকেনা। শরীয়তের চরম অবমাননা করা হয়। নিজেদের যেটুকু আছে তা দ্বারাই একাজ সম্পন্ন করা উচিত। ৫) শুনতে খারাপ মনে হলেও বিয়ে শাদীতে একটি নিয়ম অতি জরুরীভাবে চালু করা উচিত। অভ্যাগতদের জ্ঞাতার্থে অনুষ্ঠানস্থলে দৃশ্যমান জায়গায় এ মর্মে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া যায় যে, কেউ যেন তাদের মোবাইলে অথবা ক্যামেরায় পূর্বানুমতি ছাড়া কোন ছবি না তোলে। সুন্দর ভাষায় আবেদন রাখলে অতিথিরা এই নোটিশের প্রতি সম্মান দিবেন বলেই আমার বিশ্বাস। ৬) প্রয়োজনবশতঃ ই-মেইলের মাধ্যমে ছবি আদান প্রদান করায় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আর এসব কাজের সময় যাতে উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়েরা গর্হিত কিছু না করতে পারে, সেজন্য বাবা-মাকে কিংবা অন্য মুরুব্বীদের সামনে রেখেই একাজ হওয়া উচিত। ৭) একই কারণে, স্টাডির প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়ও ঘরের মুরুব্বীদের কোন সদস্যকে কম্প্যূটারের সামনে থাকা উচিত। কম্প্যূটার এমন স্থানে রাখা প্রয়োজন যাতে মুরুব্বীদের চোখের সামনে সবসময় তা থাকে। ৮) ছেলেমেয়েদের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন দেয়া কোন রকমেই যুক্তিযুক্ত নয়। এ ব্যাপারে পূর্বাহ্নেই বাবা-মাকে সতর্কমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ৯) আজকাল চাকুরীর প্রয়োজনে বায়োডাটার সাথেও একটি ছবি যুক্ত করে তা ই-মেইল করার চল আছে। এসব কাজের সময়ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। মেয়েদের ছবিতে তিনি যদি হিজাবধারী না হন, তাহলে বায়োডাটা দেয়ার সময় অন্ততঃ মাথায় ওড়নাটা দিয়ে নেয়া উচিত। যাতে করে দুষ্ট লোকেরা কাট-পেস্ট করার প্রাথমিক উপাদান লাভ হতে বঞ্চিত হয়। ধন্যবাদ সবাইকে। |
ছবি, পর্নোছবি এবং নুতন প্রজম্মের ভবিষ্যত
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন