ঢাকায় লিভ টুগেদার, কোথাও ফ্যাশন, কোথাও নীল দংশন


বিয়ে ছাড়া দাম্পত্য সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে আগ্রহ বাড়ছে নগরীতেএভাবে যারা জুটি গড়ছেন- তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চাকরিজীবী যেমন আছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ছাত্রছাত্রী, সাংস্কৃতিক জগতের অনেকেই রয়েছেন রয়েছেন শিল্পী, সাহিত্যিকওবিয়ে না করেও তারা বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়েলিভ টুগেদারের রকমফের রয়েছেকেবল অবিবাহিত নারী-পুরম্নষ লিভ টুগেদার করছে- এমন নয়, বিবাহিত পুরুষ স্ত্রী, সন্তান থাকার পরও এবং বিবাহিত নারী স্বামী থাকার পরও সম্পর্কের ভিন্ন মাত্রায় লিপ্ত হচ্ছেন কারণ হিসেবে একাধিক নারী-পুরম্নষ জৈবিক ও মানসিক শান্তির কথা বলেছেনস্টুডেন্টদের মধ্যেও লিভ টুগেদার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছেভিন্ন ধর্মের নারী-পুুরুষের মধ্যে ধর্মান্তরিত না হয়ে বিয়ে করতে সমাজে বাধা থাকায় তারা লিভ টুগেদার করছে ফেস বুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয়ের ক্ষেত্রেই তা বেশি হচ্ছেপরে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর হত্যা ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে
লিভ টুগেদার করছেন এমন একজন বলেন, পরিবারে যে যন্ত্রণা ও বাধা-বিপত্তি রয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে চাইতার পরিবার আছে সবই আছেতারপরও তিনি বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া একটি নারীকে ফ্ল্যাট ভাড়া করে রাখছেনসেখানে বাস করছেনএক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, তার স্ত্রীও সমাজে প্রতিষ্ঠিতকিন্তু দুজনের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব রয়েছেএই কারণে পুরুষটি অন্যের মুখাপেড়্গীসূত্র জানায়, এমন অনেক লিভ টুগেদার জুটি রয়েছে পুরুষ তার পছন্দের সঙ্গীকে ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছেনপ্রতিদিনই একবার ওই ফ্ল্যাটে যানরাত কাটান স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেগোপনেই অন্য সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেনদ্বিতীয় সম্পর্কে নেই কোন কাবিননামাযখন দুজন এক সঙ্গে থাকতে চাইবে না তখন তারা ভাগ হয়ে যাবেন
লিভ টুগেদার করেছেন পাঁচ বছর এমন এক জুটির সঙ্গে কথা হলোতারা দুজনই লেখালেখির সঙ্গে জড়িতস্বাধীন চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসীতারা বিয়েতে বিশ্বাস করেন নাতাদের একটি সন্তান হয়েছেসন্তান হওয়ার পর তারা সন্তানকে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেনসমপ্রতি তাদের মধ্যে সেপারেশন হয়ে গেছেসন্তানটি মায়ের কাছেবাবা চলে গেছেন বিদেশে
আরও একটি লিভ টুগেদার জুটির সন্ধান পাওয়া গেছেতারা চাকরিজীবীভাল লাগা ও ভালবাসার কারণে একে- অপরকে বিয়ে না করে একসঙ্গে বাস করার সিদ্ধান্ত নেন সেই অনুযায়ী প্রথমে তারা তিন বছর একসঙ্গে ছিলেনমাঝখানে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে আলাদা হয়ে যাননিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পরে গত কয়েকমাস থেকে তারা একসঙ্গে বসবাস করছেন প্রতিষ্ঠিত ও প্রাচীন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রফেসর দীর্ঘদিন ধরেই লিভ টুগেদার করছেনতাদের সম্পর্কের বিষয়টিও অনেক দিন ধরেই অনেকে জানেনবর্তমানে তারা একসঙ্গে আছেননারী প্রফেসর বিবাহিততার স্বামী আছেনতিনি শিক্ষক ননবাইরে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেনতিনিও জানেন তার স্ত্রীর সঙ্গে ওই ধরনের সম্পর্কের কথাতিনি প্রথমে মেনে নিতে পারেননিপরে মেনে নিয়েছেন
সূত্র জানায়, লিভ টুগেদারের ধরনও এখন পাল্টাচ্ছেআগে দুজন একসঙ্গে থাকতেন এবং তারা বাইরে অন্য সম্পর্ক রাখতেন নাএখন তারা একাধিক সম্পর্ক রাখছেন আবার লিভ টুগেদারও করছেনযখন যাকে ভাল লাগছে তার সঙ্গে থাকেনঅনেকে অর্থের অভাবে ও বয়সের কারণে বিয়ে করতে না পেরে লিভ টুগেদার করছেননাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, আমারই এক ছাত্র ও এক ছাত্রী লিভ টুগেদার করছেওরা বিষয়টি আমার সঙ্গে শেয়ার করছে তারা বিয়ে করতে চায়পারিবারিকভাবে করতে দেয়া হয়নিপরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে একসঙ্গে থাকবে
সূত্র জানায়, যারা লিভ টুগেদার করে, তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পুরুষটিই সংসারের বেশির ভাগ খরচ বহন করছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই তা হয়ে আসছেকোন কোন ক্ষেত্রে নারী সঙ্গীও খরচ ভাগাভাগি করেআর যোগাযোগের মাধ্যম এখন ফেসবুক, ই-মেইল, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, অনেক ক্ষেত্রে পরিচিত বন্ধু মহলও নানা সূত্রে জানা যায়, এখন ফেসবুকে পার্টনার খুঁজে পাওয়া অনেক সহজসেখানে গিয়ে বন্ধুত্ব করা যায়সেই থেকে তাদের মধ্যে ভাল লাগার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছেএক পর্যায়ে তারা এক সঙ্গে বাস করতে শুরু করছেএছাড়াও মোবাইল ফোন নম্বর বদলের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পরবর্তী যোগাযোগ এর মাধ্যমে দুই জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠছে পরে তাদের মধ্যে লিভ টুগেদার করার মতো সম্পর্ক গড়ে উঠছেসূত্র জানায়, লিভ টুগেদার যারা করে তাদের বেশির ভাগই পরিচয় গোপন করে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিচ্ছে তারা ভাড়া নেয়ার সময় বলে তারা স্বামী-স্ত্রীতাদের দেখে বোঝার উপায় নেই তারা-স্বামী স্ত্রী ননযদি কোথাও তারা ধরা পড়ে যান কিংবা আচরণ সন্দেহজনক মনে হয় তখন তারা ওই বাসা ছেড়ে দেন
সূত্র জানায়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশি এমন মেয়েদের লিভ টুগেদারের প্রবণতাও বেশিআর পুরুষরা ঝামেলা এড়াতেই মানসিক ও জৈবিক শান্তির জন্য ঝঞ্ঝাট নেই এমন সঙ্গী খুঁজছেন
লিভ টুগেদার করছেন এমন জুটির নারী সঙ্গী অনেক সময় ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার হচ্ছেনলিভ টুগেদারের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে পুরুষ সঙ্গী তার নারী সঙ্গীর নামে নানা অকথ্য ভাষার এসএমএস লিখে পাঠাচ্ছেএতে করে মেয়েটির জীবনকে বিষিয়ে তুলছে এক পর্যায়ে তাকে বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে হচ্ছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নারী-পুরুষের সম্মতিতেই তারা লিভ টুগেদারের মতো সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেলিভ টুগেদার করলে কারও উপর কারও কোন চাপ থাকে নাতাদের যতদিন ভাল লাগলো ততোদিন তারা একসঙ্গে থাকলোভাল না লাগলে থাকলো নাতিনি বলেন, লিভ টুগেদার অনেক বেড়ে গেছেআগামীতে আরও বাড়বে১৫-২০ বছর পর এটি এমন এক পর্যায়ে যাবে এটা বিয়ে নামক সম্পর্কে ব্যাপক ধাক্কা দিবেএখন মানুষ কোন ঝামেলায় জড়াতে চায় না সাংসারিক জীবনে আবদ্ধ হয়ে নিজের ক্যারিয়ারও নষ্ট করতে চায় নাসেই সঙ্গে তারা চায় জীবনটাকে উপভোগ করতেএজন্য তারা বিয়ে করতে চাইছে নাতারা লিভ টুগেদার করছেতিনি বলেন, লিভ টুগেদারকে আমি পজিটিভ হিসাবেই দেখি তবে লিভ টুগেদারের সম্পর্কগুলোতে যখন আধিপত্যের ও ক্ষমতার বৈষম্য দেখা দেয়আর্থিক বিষয়গুলো চলে আসে তখন সম্পর্ক নষ্ট হয় ঘটে নানা ধরনের অপরাধের ঘটনাযারা বিয়েতে বিশ্বাস করে না বলে লিভ টুগেদার করে তাদের বিষয়টি আলাদাকিন্তু যারা লিভ টুগেদার করার জন্য প্রথমে নারী সঙ্গীকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে রাজি করানপরে বিয়ে করেন নাতখন সমস্যা হয়নারী সঙ্গী তার পুরুষ সঙ্গী তাকে বিয়ে করবে এই আশায় নিঃস্ব হয়ে যানএক পর্যায়ে নারী তার সঙ্গীকে বিয়ে করতে বললে আর করে নাতখন বিপত্তি দেখা দেয়এবং খুন খারাবির মতো ঘটনা ঘটে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন