যৌবন বেচা জীবন যাদের (১৮+)


মানবাধিকার কর্মী হিসেবে একসময় যৌনজীবীদের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলসেই অভিজ্ঞতার কিছু অংশ সামুর ব্লগারদের সাথে শেয়ার করার অভিপ্রায়ে এই লেখাটি লেখছিলেখার সময় চেষ্টা করেছি সবোর্চ্চ নিমোর্হ দৃষ্টিভঙ্গী ধরে রাখতেবিষয়ের সার্বিকতা বজায় রাখার জন্য কিছু খোলামেলা আলোচনা করেছিআশা করি পাঠকেরাও খোলা মন নিয়ে পড়বেন

লেখাটিতে নিজস্ব মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যবহার সচেতনভাবেই বাদ দিয়েছিযতটুকু লিখেছি তার সবটাতেই কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও যৌনজীবীদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে

আরেকটি বিষয়, লেখাটির কিছু কিছু অংশ অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে

যৌনজীবী বলতে কি বোঝায়:

যারা যৌন কর্মের বিনিময়ে অর্থ উপার্যন করে তাদের সাধারীনকৃতভাবে যৌনজীবী বলা হয়অনেক স্থানে একাডেমিক টার্ম হিসেবে যৌনকর্মী বা (Sex Worker) শব্দটি ব্যবহার করা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে এই শব্দ চয়ন নিয়ে বিতর্ক রয়েছেসাধারন প্রমিত বাংলা ভাষার মত অন্যান্য স্থানেও এদের পতিতা (Prostitute) বলা হয়প্রচলিত কথ্য বাংলা রূপগুলো উল্ল্যেখ না করলেও চলেরাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে কিংবা ঝগড়া-ঝাটিতে কান পাতলেই এই শব্দের বিভিন্ন প্রতিরূপগুলো শোনা যায় যা হয়তো এই ধরনের লেখায় ব্যবহারের উপোযোগী নয়
এই লেখায় যৌনকর্মী বা পতিতা বিতর্কে না গিয়ে মাঝামাঝি শব্দ যৌনজীবী ব্যবহার করা হয়েছে

যৌনকর্মী বনাম পতিতা: হালের বিতর্ক:

যারা যৌন কর্মের বিনিময়ে অর্থ রোজগার করে তাদের কে কি কর্মজীবী নারী বলা হবে নাকি সামাজিক ও পারিবারিক ব্যবস্থার চরম বিরূদ্ধস্রোত হিসেবে পতিত নারী বা পতিতা বলে অভিহিত করা হবে এই নিয়েই বিতর্কের অবতারনা


-
যৌনকর্মী দল:
এটি পৃথিবীর প্রাচিনতম পেশাগুলোর অন্যতমসরল সমাজগুলো থেকে শুরু করে হালের জটিল আধুনিক সমাজ সব প্রেক্ষাপটেই নারীদের একাংশ যৌনতা বিক্রির মাধ্যমে বেচে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করে শুধু তাই নয় তাদের আয়ের উপর ভিত্তি করে বেচে থাকে নির্ভরশীল অনেক মানুষস্থানীয় অর্থনীতিতেও ব্যপক প্রভাব ফেলে এই কাজতাই এটি একটি পেশা এবং এই পেশাজীবীদের কর্মী বলাই শ্রেয়

-
পতিতা দল:
এই অংশের মানুষ মনে করেন যৌনতা বিক্রি করা একটি মারাত্নক নৈতিক ও সামাজিক অপরাধবিবাহ বর্হিভূত যৌনতাকে তারা নৈতিকতার দৃষ্টিতে অন্যায্য বলে বিবেচনা করেনতাদের যুক্তি হলো যৌনকর্মকে যদি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় তাহলে চুরি, ডাকাতি কিংবা সামাজিকভাবে অগ্রহনযোগ্য অন্যান্য কাজকেও মেনে নেয়া যায়, কারন চোর-ডাকাতের আয়ের উপর ভিত্তি করেও বেচে থাকে অনেক মানুষএই অর্থও স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেকিন্তু সেটা অসম্ভবতাই যৌনজীবীতা কোন পেশা হতে পারে না বরং এটা মারাত্নক একটা সামাজিক স্খলন

কিন্তু যারা আমরা সাধারন জনতা তাদের ভাষ্য কি হতে পারে? সাম্রাজ্যবাদী ব্যবসাদারী লোকজন কিংবা রক্ষণশীল ভাবাপন্ন জনগোষ্ঠী তারা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে যাই বলুক না কেন, কে কি ভাবে যৌনজীবীদের দেখবে এটা একান্ত নিজস্ব বিষয়

কয় ধরনের যৌনজীবী আছে:

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যৌনজীবীদের চার ধরন দেখা যায়যথা:

-
পতিতালয়ের যৌনজীবী
-
রাস্তার যৌনজীবী
-
আবাসিক হোটেলের যৌনজীবী
-
বাসা ভাড়া করা আবাসিক যৌনজীবী

এছাড়া সময়ের উপর ভিত্তি করেও ভাগ করা যায়যেমন:

-
পুরা বেলা
-
হাফ বেলা
-
খ্যাপ মারা
-
সময়-সুযোগ পেলেই কাজ করা
-
শুধু প্রয়োজনের সময় কাজ করা

যে কারনে নারীরা এই পেশায় আসে:

-
নিতান্তই পেটের দায়ে
-
ভালো চাকরীর প্রলোভনে প্রতারিত হয়ে
-
প্রেম বা বিয়ের মিথ্যে আশ্বাসে পুরুষ সঙ্গী কতৃর্ক প্রতারিত হয়ে
-
ব্ল্যাক মেইলড হয়ে
-
সংসারের বাড়তি খরচ সামাল দেবার জন্য
-
নিজের বাড়তি হাতখরচ মেটানোর জন্য
-
প্রেমে ব্যর্থতা কিংবা মানসিক হতাশার জন্য (?)
-
সময় কাটানোর জন্য
-
নেশার খরচ যোগাবার জন্য
-
যৌনতা/ বহুগামীতা উপভোগ করার জন্য

কারা এই পেশায় আসে:

-
গ্রামের সহজ সরল কিশোরী
-
গ্রামের বিধবা
-
গার্মেন্টস কর্মী
-
শহরের রাস্তা ও উদ্যান ভিত্তিক মহিলা (বিশেষত: কিশোরী)হকার
-
বাসা বাড়ীর কাজের ছুটা বুয়া
-
ছাত্রী (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের)
-
নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ঘরের গৃহবধূ
-
ফিল্ম বা মিডিয়া লাইন সম্পর্কে উচ্চাকাঙ্খী সহজ সরল রমনী

খদ্দের কারা:

যৌন কাজ করার জন্য যারাই যৌনজীবীদের দ্বারস্থ হয় তারাই খদ্দেরতারা সাধারনত: পুরুষনিদির্ষ্ট কোন পেশাজীবী নয় তারাতারপরও যৌনজীবীদের মতানুসারে যারা সাধারনত বেশী পরিমানে খদ্দের হয় তারা হলো:

-
রিক্সাঅলা, ঠেলাঅলা, হকার
-
আন্ত:জেলা ট্রাক-বাস ড্রাইভার
-
কলেজ ছাত্র
-
মাদকাসক্ত ব্যাক্তি
-
শিল্প-সংস্কৃতিক/ মিডিয়া লাইনের লোকজন
-
স্থানীয় মাস্তান
-
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ইত্যাদি

শেষ দুই দল সাধারনত: বিনামূল্যে শমসুর ভূমিকায় অভিনয় করে থাকে

যে কারনে যৌনজীবীরা সহজে তাদের পেশা ছাড়ে না:

-
যৌনজীবীরা পেশা ছাড়ে না কাচা অর্থের ব্যপক ছড়াছড়ির জন্যযে কারনে চরমপন্থীরা আনসারের চাকরী ছেড়ে আবার চরমপন্থী হয়
-
একবার যখন নষ্ট হয়েই গেছি তখন আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবো না। (তাদের জবানীতে)
-
ফিরে গেলে বাবা-মা/ পরিবার গ্রহণ করবে না
-
ফিরে গেলে সমাজে টিকে থাকা যাবে না
-
কারো উপর অভিমান থেকে নিজেকে পোড়ানোর জন্য
-
প্রতিদিন নতুন নগ্নতা ও নতুন যৌন বৈচিত্রের নেশায়

জেনে রাখা ভাল:

-
৯২% যৌনজীবী কোন না কোন যৌন রোগে আক্রান্তযার মধ্যে বেশীরভাই মারাত্নক ও দীর্ঘমেয়াদিবিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ইত্যাদি একজন পেশাদার যৌনজীবীর শরীরকে নিরাপদ পোষক হিসেবে ব্যবহার করেক্ষতযুক্ত প্রশস্ত যৌনাঙ্গ যৌনজীবীদের একটা সাধারন বৈশিষ্ট্যযতই কন্ডম বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন এই সকল জীবাণুগুলো অতি উচ্চমাত্রার সংক্রমক বৈশিষ্ট্যের অধিকারীকোন লাভ হয় না

-
পেশাদার অনেক যৌনজীবী আত্নরক্ষা ও আক্রমনের জন্য জিভের নীচে বিশেষ প্রকৃয়ায় অর্ধেক ভ্লেড লুকিয়ে রাখে যা যেকোন সময়ে মারাত্নক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়

-
অনেক যৌনজীবী যৌন কাজের বদলে ব্ল্যাক মেইল করে আরো অধিক উপার্জনে আগ্রহী হয়যেমন: রিকসা/ টেক্সীতে উঠে কিংবা সিনেমা হলের অন্ধকারে কিছুটা যৌনতার পর চিৎকার করার হূমকী দিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়আবার বাপের বাড়ী যাওয়া বৌয়ের খালি বাসা বাড়ী কিংবা মেসে যৌনকর্ম সম্পাদনের পর অবস্থান চিনে পরে যেকোন সময়ে আবার এসে সব ফাস করার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় ইত্যাদি

-
অধিকাংশ পেশাদার যৌনজীবী মারাত্নকভাবে মাদকে আসক্ত থাকে মাদকাসক্তির সাথে যৌন রোগের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক

টুকরো তথ্য:

-
যৌনজীবীদের নিজস্ব কিছু সাইন বা ভঙ্গী রয়েছেআঙ্গুল, চাহনী, বিশেষ হাটার ভঙ্গী, সম্বোধন ইত্যাদির মাধ্যমে তারা খদ্দের ঠিক করে
-
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক যৌনকর্মীদের গ্রেফতার করা হয় সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলো থেকে অনেক বেশীশুক্র, শনি বার কোর্ট বন্ধ থাকায় চালান হয় নাতখন আটক যৌনকর্মীদের অবস্থান হয় থানা হাজতেবাদবাকী নাটকটা পাঠকের বিবেচনা
-
ভাড়া বাসা ভিত্তিক আবাসিক যৌনকর্মীদের এমন কি এপার্টমেন্টে বাসাভাড়া করে থাকতে দেখা যায়সেখানে একজন সর্দার্নী থাকেপ্রতিবেশীরা জানেও না তাদের পাশের বাসায় কি হয়প্রতিবেশীদের বলা হয় ভাই বা বোনের মেয়েরা পড়ালেখা/ চাকুরী ইত্যাদি উপলক্ষ্যে তার কাছে থাকেকিন্তু একজন বাঙ্গালী হিন্দু মহিলার বোনের দুই মেয়ে কিভাবে পাহাড়ী মঙ্গলয়েড হয় তা জিজ্ঞাস করার কৌতুহল মৌচাক মার্কেট সংলগ্ন একটি এপার্টমেন্টের অধিবাসীদের মনযোগ আকর্ষণ করার সময় পায় না

-
যৌনজীবীদের মধ্যে যারা দেখতে শুনতে ভাল আর চালাক চতুর কিংবা উচ্চাকাঙ্খী তাদের একটা স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে এই কাজের মাধ্যমে অধিক আয় করারমধ্যপ্রাচ্য কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নততর কিছু দেশ বিশেষত: দুবাইকে তারা এই কাজের স্বর্গরাজ্য মনে করে

-
অধিকাংশ যৌনজীবীদের একাধিক দালাল থাকেসাধারণত: মোবাইলের মাধ্যমে এরা খ্যাপের (খ্যাপ - যৌনজীবীদের ব্যবহৃত শব্দমানে - চুক্তি, কাজ পাওয়া ইত্যাদি) খবর পায় দালালদের আয়ও অনেক শিক্ষিত চাকুরীজীবী মধ্যবিত্তের চেয়ে অনেক বেশী হয়

-
সমাজের গভীরে অনেক রিক্রুটার চলাফেরা করে যাদেরকে আমাদের মত সাধারন মানুষেরা ঘুর্ণাক্ষরেও সন্দেহ করতে পারবেনাকারো কারো কথাবার্তা মমতাময়ী মা-খালাদের মত, কারো কারো বেশভূষা বেশ রুচিশীল, রীতিমত শিল্প সম্মতএরা ঘুরে ফিরে খবর নেয় কারা স্বামীর সাথে বনিবনাহীনভাবে আছে কিংবা যৌনতায় অসুখী, কারা চরমভাবে নিরূপায়ী, কারা উচ্চাকাঙ্খী, কারা যৌনতার দিক থেকে বহুগামীতার প্রত্যাশায় ব্যকুল - ইত্যাদি সুবিধামত ও বিভিন্ন মেয়াদী মোটিভেশান দিয়ে তারা নারীদের এই পেশায় টেনে নিয়ে আসে

-
বড় বড় মাছের বাজারে পুরাতন কিছু ব্যবসায়ী আছে যারা দূর্লভ কিংবা বড় আকৃতির লোভনীয় কোন মাছ পেলে নির্দিষ্ট কোন কোন ক্রেতাদের খবর দেয় কিংবা সরাসরি বাসায় পাঠিয়ে দেয়ঐসকল ক্রেতাও দাম-দরের তোয়াক্কা না করে মাছ কিনে নেয়ঠিক একই ভাবে কিছু খদ্দের আছে যারা নতুন কোন কুমারী মেয়ে এই লাইনে এলে খবর পেয়ে যায় বিশেষত: কিশোরী বা সদ্য তরুনীদের চাহিদা ব্যাপক বেশীএরা মেয়েদের কুমারীত্ব ছিন্ন করার বিষয়ে বিশেষভাবে আসক্ত থাকেকোন কোন ক্ষেত্রে পনের-কুড়ি হাজার টাকাও তারা অবলীলায় খরচ করে ফেলে

-
একটু বয়েসী যৌনজীবীদের চাহিদা বিশেষভাবে হ্রাস পায় তখন তারা চার-পাচ জন কমবয়েসী মেয়ের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত হয়এদেরকে সর্দারনী বলা হয়প্রভাবশালী মহলে এই সব সর্দারনীদের থাকে বিশেষ যোগাযোগবেশী বয়েসী যৌনজীবীদের অনেকে দালাল কিংবা রিক্রুটার হিসেবেও কাজ করে

-
একজন পেশাদার যৌনজীবীকে বিশেষ অবস্থায় এক দিনরাতে পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশজন খদ্দের নিতে দেখা গেছেঅবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যঅধিক সংখ্যক খদ্দের নেয়ার জন্য তারা কিছু প্রচলিত মন্ত্র জপে, কোমরে বাধে গাছের শিকড়কি গাছের তা জানা যায় নিসেটা টপ সিক্রেটতাদের দৃষ্টিতে খদ্দেররা বস্তা বিশেষদুএকটা ব্যাতিক্রম ছাড়া বেশীরভাগ খদ্দের বিপুল বিক্রমে শুরু করলেও দুতিনটা দপাদপি- তারপর কাজ শেষযৌনকর্মে যৌনজীবীদের আচরন থাকে পুরোপুরিভাবে নিস্কৃয় ও অসহযোগিতামূলকফলে এতো সংখ্যক খদ্দের নিতে তাদের মোটেও বেগ পেতে হয়না

-
সবচেয়ে কম বয়সী যৌনজীবীর বয়স আট আর সবচেয়ে বেশী যৌনজীবীর বয়স ছাপ্পান্ন পর্যন্ত দেখেছি যারা নিয়মিত যৌনকর্ম করে যাচ্ছে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন